বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে সবজির দাম। দাম যেন কমছেই না। উল্টো বেশকিছু সবজির দাম বেড়েছে। দু-একটি বাদে বেশিরভাগ সবজির কেজি এখন ৫০ টাকার ওপরে। ১০০ টাকার কাছাকাছি রয়েছে বেগুন ও বরবটি। শতকের ঘর ছাড়িয়েছে টমেটো ও গাজর। ওদিকে কাঁচামরিচের ঝালও কম নয়। কেজি তার ২০০ টাকা ছুঁই ছুঁই।
এদিকে সবজির দরের ঊর্ধ্বগতি ঘাম ছোটাচ্ছে ক্রেতাদের কপালে। মহামারীর মন্দা সময়ে মাছ-মাংস কেনা যেখানে দায়, সেখানে স্বল্পআয়ের মানুষের কাছে সবজিই ছিল একমাত্র ভরসা। লম্বা সময় ধরে বেশিরভাগ সবজির দামও রয়েছে নাগালের বাইরে। এতে বাজারে এসে অনেকেই পড়ছেন অস্বস্তিতে।
রাজধানীর রায়েরবাগ বাজারে মো. হানিফ রহমান নামের একজন ক্রেতা বলেন, করোনায় বেতন-ভাতা অর্ধেক হয়ে গেছে। মাছ-মাংস কজন আর কিনতে পারে। ভরসা ছিল সবজি। সেটার দামেও আগুন। এক কেজি সবজির দাম এখন ভালো মানের যে কোনো চালের দামের চেয়েও বেশি। মহামারীর সময়ে মানুষ যেখানে চাল কিনেই খেতে পারছে না, সেখানে এত দামে সবজি কিনবে কিভাবে?
গতকাল রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরাসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগুনের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। করলা ৬০-৭০ টাকা, কচুরমুখী ৬০-৭০ টাকা, চিচিংগা, কাকরোল ও ঝিঙা ৫০-৬০ টাকা, কচুরলতি ৪০-৬০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, পটোল ৩০-৫০ টাকা ও ঢেঁড়স ৩০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মান ও বাজারভেদে পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। তবে দামের তালিকায় এখন সবার ওপরে রয়েছে কাঁচামরিচ। বাজারভেদে কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে। কোথাও কোথাও এলাকার বউবাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। অন্যদিকে তিন দিনের ব্যবধানে আলুর দামও বেড়েছে। ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আলু এখন ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।
দামের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিবাগ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোকাদ্দোস মিয়া বলেন, টমেটো ও গাজরের মৌসুম শেষ। বাজারে এখন যা পাওয়া যাচ্ছে তা মজুদকৃত। সেটাও দিন দিন কমে আসছে। তাই দামও বাড়ছে।
কারওয়ানবাজারের সবজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়াজ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী বলরাম চন্দ্র জানান, সবজির ফলন এবার ভালো হলেও বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই সরবরাহ কম। এ জন্য বেগুন, কাঁচামরিচ, বরবটিসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি রয়েছে। কাঁচা পণ্য হওয়ায় দাম এক লাফে বাড়ে-কমে। ক্ষেতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। ততদিন দাম চড়াই থাকবে।
এদিকে সবজির এমন চড়া দামে দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ। রায়েরবাগ বাজারে বাজার করতে আসা ভ্যানচালক মো. আজিজ হাওলাদার বলেন, এমন দুর্দিনে সবজি কিনে অন্তত তিন বেলার খাওয়া চললেও হইতো, কিন্তু দামের কারণে সেইটাও সম্ভব হইতাছে না। আগে আলুভর্তা ডাল দিয়ে ভাত খাইতাম। এখন আলুর দামও বাড়ছে। এখন কলা কিনছি চারটা। তরকারির লগে কলার খোসা ভর্তা কইরাও এক বেলা বেশি ভাত খাওন যাইবো।
Leave a Reply